আজ ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ক্যাম্পাসের নিজ কক্ষে আত্মহত্যা করলেন জাবি শিক্ষার্থী

বিশেষ প্রতিনিধি, সাভার ( ঢাকা)
সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের নিজ কক্ষে আত্মহত্যা করে। এর আগে আধ্যাত্মিক গবেষণামূলক একটি স্ট্যাটাস দেয় তার নিজ ফেসবুক প্রোফাইলে।
মঙ্গলবার (৪এপ্রিল) সন্ধ্যা সাতটার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান-৪৫ ব্যাচ এর শিক্ষার্থী আরাফাত সিয়াম (২৫) রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তার মরদেহ মীর মোশাররফ হোসেন হলের (এমএইচ হল) আবাসিক এর (ব্লক-বি, রুম নং-১১৫) কক্ষের ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে তার সহপাঠীরা। এ সময় তার কক্ষের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
 সে একা রুমে একা থাকতো বলে জানা গেছে। সকাল হতে রুমের দরজা বন্ধ থাকায় কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জানালা ভাঙ্গে তাকে ফ্যানের সাথে ঝুলতে দেখে সহপাঠীরা। পরবর্তীতে দরজা ভেঙ্গে বের করা হয় তার লাশ। ধারণা করা সকালেই সে আত্নহত্যা করেছে।
নিহত শিক্ষার্থীর ঘনিষ্ঠ সহপাঠীদের নিকট থেকে জানা যায়,  আধ্যাত্মিক জগত নিয়ে ভাবতো এবং ঐ বই পড়তো। জীবন, দেহ, আত্মা এসব নিয়ে চিন্তা করতো এবং মেডিটেশন করতো। সর্বশেষ গত ৩ তারিখের ফেসবুক স্ট্যাটাসে সে মৃত্যু নিয়ে নিজের ভাবনা জানিয়েছিল। যেটা ছিল আধ্যাত্মিক ভাবনা। এসব ভাবনা থেকেই সে আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরাফাত রহমান আত্মহত্যা করার আগে সোমবার (৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৪টা ২৫ মিনিটে তার ফেসবুক ওয়ালে (Arafat Siam) একটি স্ট্যাটাস দেন।  যার শিরোনাম ছিল, ‘অন দ্য ওয়ে টু ইটারনিটি’।
পোস্টটির সারমর্ম ছিল- ‘আজ আমি আমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি। এটি একটি স্বর্গীয় মুহূর্ত। বহুদিন ধরে আমি মেডিটেশন করি। আজকেও অন্যান্য দিনের ন্যায় মেডিটেশনে থাকার সময় কেঁপে উঠি। এ অবস্থায় আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পাই। আমাদের দেহ মূলত সীমাবদ্ধ কিন্তু আত্মা অসীম। আর আত্মাই হচ্ছে মূল শক্তি। মৃত্যুতে এর কিছু হয় না। জীবনের উদ্দেশ্য বুঝতে হলে আগে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়। মৃত্যুকে ভয় পাওয়া উচিত নয়। আমি এখন জীবনের স্বাদ আস্বাদন করার জন্য প্রস্তুত। আমি জানি পৃথিবীর সকলেই আমার বিরোধিতা করবে।
সঙ্গে তিনি গসপেল অব জনের মৃত্যু সম্পর্কিত একটি অংশ জুড়ে দেন।
তিনি আরও লিখেন, আমি প্রায় সম্ভাব্য সব বই পড়েছি। ….কিন্তু একটা বিষয় জানা জরুরি যে, কেউ তোমাকে এটা শেখাতে পারবে না। ….জীবনকে বুঝতে হলে তোমাকে আগে মৃত্যুকে বুঝতে হবে। এটা সবকিছুর পরিসমাপ্তি। …যখনই তুমি মৃত্যুকে বুঝতে পারবে, তখনই তুমি জীবনের উদ্দেশ্য জানতে পারবে। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক বীরেন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে এখানে আনা হয় তাকে। আমরা পরীক্ষা করে দেখি সে আগেই মারা গেছে। আমরা যখন মরদেহ পাই, তখন দেখেছি রশি গলার মধ্যে গেঁথে আছে, ফাঁস লেগেই তার মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে  উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নুরুল আলম, প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান, রেজিস্ট্রার (চুক্তিভিত্তিক) রহিমা কানিজ সহ প্রশাসনে দায়িত্বরত একাধিক শিক্ষক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap